হৈ চৈ , ঝালমুড়ি, পিঁয়াজু , চটপটি, বৃস্টির ছাঁটে ছাতার ঝাঁপি খোলাখুলি, কাবাব, সমুচা, গরম জিলেপী ভাজা, ছোলাবুট কুটমুট, চানাচুড় ঝালমুঠ, ডালপুরি , লাল পরী, সন্দেশ , চাটপাপড়ি …
খাবারের তালিকায় আরো কত কী যে ছিল ! ছিল বাঁশ-কাগজের কাপ-প্লেট, চামচ । টেবিলে বিছানো ঠোঙ্গার বাদামী কাগজ, বাঁশের ঝুড়িতে সমুচা, সিংগাড়া, ডালপুরি । বাচ্চাদের জন্য ক্যান্ডি আর জুস .. এত খাবারের আয়োজন দেখে দিশেহারা আমি কোন্ টেবিল ছেড়ে কোনটায় যাবো !
এদিক থেকে ডাক শুনি ‘আপু’, ওদিক থেকে ক্যামেরা হাতে রাজীব, পাশে এসে হাসিমুখে শাপলা, অন্য কোনায় নার্গিস-হাসিবের ঘাপলা! চারিদিক মুখরিত আনন্দিত-জনগনের কলরবে, বেশ গরম হোল সকলের সরগোলে পার্কের নির্জন পরিবেশ । লাল সবুজের দেশী সাজে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কিচির মিচির-এক পূর্নদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা ! তিনটায় শুরু হয়ে দ্বিগুন সময় নিয়ে ই টি সিটন পার্কের একটা স্পটে সেই সিনেমা চলতে লাগলো সন্ধ্যার অন্ধকার নামা পর্যন্ত ।
নার্গিস আর ইফতেখারের উদ্যোগে অপূর্ব নিপুণ পরিবেশনার সম্পূর্ন দেশীয় আমেজে সাজানো এই ঝালমুড়ি আড্ডা সত্যিকার অর্থেই প্রতিটি সদস্যের মনে লাল-সবুজের আঁচড় কেটে স্মৃতি হয়ে রইল – এই প্রবাসে বাংলার বেশে হৃদয়ে বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশী ফুড লাভার্স অফ ক্যানাডার গুণী সদস্যদের নিজেদের পরিবেশনা, ফুটন্ত তেলে ভাজা জিলাপী, ডুবো তেলে ভাজা ডালপুড়ি, ঝাকানাকা ঝালমুড়ি … অতঃপর ধূমায়িত বৈকালিক চা !
গামছা গলায় বাঁধা মচুয়া এক নায়ককে ঘুরে ঘুরে তদারক করতে দেখা গেল, মাথায় গামছা মোড়া এক নায়ককে দেখা গেল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে চায়ের ঝুড়ি নিয়ে অন্যদেরকে চা এগিয়ে দিতে, এক সুবেশী তরুণ নায়ক খেলাধুলার তত্ত্বাবধান করতে গিয়ে সেদিন আর টিকটক করতে পারেন নাই, এক নায়ক মার্সিডিজ থেকে নেমেই ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন, এক মধ্যবয়সী নায়ক শালীদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়ে বয়স ভুলে ঐ ফিল্ডেই ফিল্ডিং শুরু করে দিলেন !!
নায়িকারা এখানে ওখানে হাসিমুখে স্হির হয়ে – মানে কেউ তার ছবি তুলছে ! কেউ আচঁল উড়িয়ে, কেউ ঘোমটা দিয়ে , কেউ হাসিমুখে বাংলা সিনেমার নায়িকা চরিত্রে ফটো খিঁচতে লাগলেন ।
আহারে কী সোনালী সেই সময়ে … আমাদের সকল গ্লানি মুছে দিতে নামলে এক পশলা বৃস্টি । সবাই তবুও অনড়.. আড্ডা আরো জমলো। জিলেপীর গরম তেল নামিয়ে তোলা হোল স্টীলের হাড়ি .. ছুটে এসে পানি ভরে দিল শ্যামল , টুপটাপ চা পাতা, হাসিবের কার্নেশনের ক্যান কাটা …ধোয়া তুলে ফুটতে লাগলো টেটলী চা !
হঠাৎ মৌমাছিদের মতন গুঞ্জন তুলে ছুটে এলো সবাই – গরম চায়ের কাপ হাতে আড্ডার উষ্ণতা আরো গভীর হোল ।
(সবাইকে চিনি ছাড়া চায়ে অভ্যস্ত করতেই হয়ত ভুলক্রমে চিনির কৌটা বাসায় ফেলে গিয়েছিলাম, সুইট -তাই না? )
আঁধার নামার সময় দেখলাম সবাই একসাথে সবকিছু গুছানোর কাজে লেগে গেল ! একগুচ্ছ সহযোগী হৃদয়ের অদ্ভুত রীদম ।
বিনিসুতার মালার মতন এক অবিচ্ছেদ্দ বন্ধন আমাদের ।
কখন ও বসন্ত কখন ও শ্রাবণ,
কেন যে এতো ছলনা——-
গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুজি আর হলো না।