কুইবেকের ধর্মনিরপেক্ষ আইনকে বৈধ বলে মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক মার্ক-আন্দ্রে ব্লাংকার্ড। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা মুসলিম নারীদের অধিকারের লঙ্ঘন এবং ধর্মীয় পরিচায়ক ব্যবহারকারীদের জন্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক বলে মনে করেন তিনি। ইংরেজি ভাষার স্কুল বোর্ড ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত ক্লজটি বাদ দেন এ বিচারপতি। ১৪০ পৃষ্ঠার রায়ের উপসংহারে বিচারপতি ব্লাংকার্ড বলেন, বিল ২১ নামে পরিচিত আইনটি কানাডিয়ান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
২০১৯ সালের জুন মাসে আইনটি গৃহীত হয়। আইন অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পদে কর্মরতদের যেমন শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারকদের হিজাব, কিপ্পা ও টুপি পরা নিষিদ্ধ করা হয়। একাধিক সংগঠন আইনটির বিরুদ্ধে আদালতে যায় এবং একে বৈষম্যমূলক ও কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমের লঙ্ঘন বলে যুক্ত তুলে ধরে। তবে কুইবেক সরকারের ক্লজটি অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবহারের কারণে এতে জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত আদালতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ থেকে আইনটিকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। বিচারপতি ব্লাংকার্ড এজন্য কুইবেক সরকারের সমালোচনা করেন। তবে একে বৈধ বলে রায় দেন।
ধর্মীয় পরিচায়ক ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুতর ও নেতিবাচক বলে বিচারপতি মন্তব্য করলেও ধারাটি চালু করার মাধ্যমে আইনটি মোটা দাগে টিকে গেল। বিচারপতি বলেন, এই শ্রেণির মানুষরা তাদের বিশ^াসের সঙ্গে আপোষ না করলে আর নতুন করে সরকারি চাকরির আবেদন করতে পারবেন না। এটা যে নিষ্ঠুর এবং যাদের উদ্দেশ্য করে আইনটি করা হয়েছে তাদের সঙ্গে অমানবিকতা সেটা বুঝতে অসুবিধা নেই।
মুসলিম নারী বিশেষ করে যারা যেসব শিক্ষিকা হিজাব পরেন তাদের ক্ষেত্রেও আইনটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শালি বলে মনে করেন বিচারপতি ব্লাংকার্ড।
শুনানিতে কুইবেক সরকার বারবার এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, বিল ২১ আধুনিক এবং কুইবেকের অধিকাংশ জনগণের এতে সমর্থন আছে। যদিও সমালোচকদের দাবি, ধর্মপ্রাণ সংখ্যালঘুদের উদ্দেশেই আইনটি করা হয়েছে। মোটা দাগে ধর্মনিরপেক্ষ আইন বহাল থাকাকে কুইবেকবাসীর বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রিমিয়ার ফ্রাসোয়াঁ লেগু। যদিও উপসংহারে ইংলিশ স্কুল সম্পর্কিত রায়কে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও কুইবেকের অভিন্ন মূল্যবোধের মধ্যে ভাষা কোনো বাধা নয়।
রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে দ্য ইংিলিশ মন্ট্রিয়ল স্কুল বোর্ডও। বোর্ডের চেয়ারম্যান জো অর্টোনো বলেছেন, রায়ের ফলে ইংলিশ স্কুল বোর্ডগুলো যোগ্য শিক্ষক নিয়োগদান শুরু করতে পারবে। তারা ধর্মীয় পরিচায়ক স্মারক ব্যবহার করুক বা না করুক।
তবে আইনটির বিরুদ্ধে তাদের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছে রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিজ অ্যাসোসিয়েশন ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাদের আইনজীবীরা রায়টি পরীক্ষা করে দেখছেন বলে জানিয়েছে সংগঠন দুটি।